দুধ মা নয়, ফুটফুটে নবজাতক ছেলে সন্তানটিকে পেলেন ম্যাজিস্ট্রেট দম্পতি





দুধ মা নয়, ফুটফুটে নবজাতক ছেলে সন্তানটিকে পেলেন ম্যাজিস্ট্রেট দম্পতি

আমিরুল ইসলাম কবির, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ

গাইবান্ধায় ধানক্ষেতে কুড়িয়ে পাওয়া জীবিত নবজাতক ছেলে সন্তানটিকে পেলেন না দুধ মাতা শামীমা আক্তার সুমনা। তার বদলে শিশুটিকে লালন-পালনের দায়িত্ব পেয়েছেন এক অভিজাত পরিবার।

গাইবান্ধার পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নান মিয়া পরিবারটির পরিচয় প্রকাশ না করলেও জেলা প্রশাসক(ডিসি) আবদুল মতিন জানান, নিঃসন্তান চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রমেশ কুমার দাগা ও তার স্ত্রীর কাছে শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হয়েছে।

আইনগত প্রক্রিয়া শেষে রবিবার বেলা ১২টায় গাইবান্ধায় কর্মরত ওই ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার (সন্তানহীন) হাতে নবজাতককে তুলে দেন পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নান মিয়া।

এ লক্ষ্যে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, শিশুটির ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের খামার মামুদপুর গ্রামের গোডাউন বাজার এলাকার পাকা রাস্তার পাশের ধানক্ষেতে জীবিত ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। ভোরের বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হলে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় হরিণাবাড়ী তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ তাকে দ্রুত গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে। এরপর থেকে শহরের প্রফেসর কলোনির খন্দকার শরীফ আহম্মেদের স্ত্রী শামীমা আক্তার সুমনা টানা ছয়দিন ধরে তাকে বুকের দুধ পান করানোসহ মাতৃস্নেহ দিয়ে আসছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এসপি আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা চিকিৎসাসহ শিশুটির সব দায়িত্বভার গ্রহণ করি। শিশুটি বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। তাই তার ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে একটি ভালো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করছি।`

যার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, তার নাম প্রকাশ না করলেও এসপি জানিয়েছেন, যিনি শিশুটিকে দত্তক নিয়েছেন, তিনি একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা।

তবে এসপি বলেন, শিশুটির ১৮ বছর হওয়া পর্যন্ত আমরা নিয়মিত খোঁজ-খবর নেব।

সন্তানটিকে ফিরে পেতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপকামনা করেন সুমনা।

তবে জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বলেন, 'আমি শিশু কল্যাণ বোর্ডেরও সভাপতি'। বোর্ডের কাছে শিশুটিকে দত্তক পেতে আবেদন জানিয়েছিলেন,দুধমা শামীমাা আক্তার সুমনা ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রমেশ কুমার দাগা দম্পতি। আমরা যাচাই-বাছাই করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, দুধমার অগ্রাধিকার থাকলেও তার ঘরে একটি সন্তান রয়েছে,আর রমেশ কুমার দাগার কোন সন্তান নেই। তাই বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে সমস্ত আইনগত প্রক্রিয়া শেষে আমরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে শিশুটিকে তুলে দেই।

এদিকে, নবজাতকের জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন দুধমাতা শামীমাা আক্তার সুমনা। এ কান্নার চোখের পানির দায়ভার কে নেবে, কে দেবে মাতৃত্বের দাম, কে দেবে এ বুকফাটা আর্তনাদের জবাব..?

রবিবার দুপুরে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সুমনা বলেন, আমি ওই শিশুটিকে হাসপাতালে ৬ দিন নিজের বুকের দুধ পান করাই। আমি এই ৬ দিন শিশুটিকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করছি। ওইসময় আমাকে বলা হয়েছিল বাচ্চাটি আমাকে দেয়া হবে। আর আজকে সকালে হাসপাতাল থেকে এনে আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সুকৌশলে বাচ্চাটিকে অন্য আর একজনকে দেয়া হলো। আমি গরীব এটাই কি আমার অপরাধ? এসময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ও নবজাতকটিকে তার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আকুল আবেদন জানান।

উল্লেখ্যঃ খামার মামুূদপুর গ্রামের মেনহাজুল ইসলাম সজীবের মা গত ১৬ এপ্রিল সকালে ধানের জমি দেখতে যেয়ে উল্লেখিত স্হানে আলের ধারে কাপড় দিয়ে মোড়ানো শিশুটিকে দেখতে পান। এক পর্যায়ে ওই মহিলা ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে চিৎকার শুরু করেন। পরে মুহূর্তের মধ্যে স্হানীয় লোকজন শিশুটিকে দেখার জন্য ভীড় জমায়। শিশুটি জীবিত দেখে মেনহাজুল ইসলাম সজীব দ্রুত চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যান এবং বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেন।





Like>Comments>Share

No comments

If you have any doubts. Please let me know.

Powered by Blogger.